স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার থেকে নদীতে ডিম ছাড়তে থাকে মা মাছ। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্তও নদীর বিভিন্নস্থানে ডিম পাওয়া যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নমুনা ডিম দেয় মাছ। রাতে ঝড়ো বৃষ্টি ও জোয়ার সৃষ্টি হওয়ার পর শুক্রবার সকালে ব্যাপকভাবে ডিম ছাড়ছে মা মাছ। এরপর ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে উঠেন নদীর দুই পাড়ের (রাউজান-হাটহাজারী) কয়েকশ মৎস্যজীবি। তারা বৃহস্পতিবার থেকে ডিম সংগ্রহের প্রত্যাশায় নদীতে ডিম ধরার নৌকা, বালতি, জাল নিয়ে নদীতেই অবস্থান নিয়েছিল। অবশেষে যেন তাদের মুখে হাসি ফুটে শুক্রবার সকালে। তবে বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহের পরও অনেক ডিম সংগ্রহকারীর মুখে হাসি নেই লকডাউনের কারণে। ডিম থেকে ফুটানো রেণুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তা এবার ক্রেতা সংকটে আশঙ্কা করছেন সংগ্রহকারীরা। ফলে দাম হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর বলেন, সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ৩টার পর পর্যন্ত কমপক্ষে রাউজান-হাটহাজারীর ৬১৫জন ডিম সংগ্রহকারী নদী থেকে মা মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। একেকজন ডিম সংগ্রহকারী কয়েক কেজি করে ডিম পেয়েছে।
তিনি জানান, এবার নদীতে ডিম পাওয়া পরিমাণ গতবছরের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনটি বিভাগ অর্থ্যাৎ মৎস্য অধিদপ্তর, আইডিএফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিচার্জ ল্যাবটারীর প্রাথমিক হিসেবে অনুযায়ী, এবার ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। যা গতবছর ছিল ৮ হাজার কেজি।
তিনি আরো জানান, ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য রাউজানের মোবারেকখীলে ১টি, হাটহাজারী উপজেলায় ৩টি হ্যাচারী এবং রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় ৬৮ ও হাটহাজারীতে অর্ধশতাধিকের বেশি কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়।
নদী পাড়ের রাউজান পৌরসভা অংশের ডিম সংগ্রহকারী সুজন বড়ুয়া বলেন, ডিম সংগ্রহ হলেও তার রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করা এবার সহজ হবেনা। কেননা হালদা নদীর রেণুর চাহিদা সারাদেশে থাকলেও এবার করোনাভাইরাসের লকডাউনের কারণে দুর-দুরান্তের ক্রেতারা রাউজান-হাটহাজারীর মৎস্যজীবিদের কাছে পৌঁছতে পারবে না। দাম হয়তো আগের তুলনায় কমে যাবে। কাজেই ডিম থেকে রেণু ফুটিয়ে অনেকদিন সংরক্ষণ রাখতে হবে।
হালদা নদীতে অবস্থান করা হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া দুপুর আড়াইটার দিকে বলেন, আমার দেখা এ যাবৎকালের সর্বাধিক সময় পর্যন্ত ডিম ছেড়েছে হালদার মা-মাছ। এখনো (শুক্রবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত) ডিম সংগ্রহ করছেন নদীর রাউজান ও হাটহাজারীর দুই অংশের সংগ্রহকারীরা। ডিম সংগ্রহের পরিমাণ নিয়ে এনালাইসিস করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবীর সোহাগ বলেন, ডিম দেওয়ার বিষয়টি দেখার জন্য হালদা নদীতেই ছিলাম। দুপুর পর্যন্ত মৎস্যজীবিরা ডিম সংগ্রহ করছিল নদীতে থেকে। তাতে মনে হলো, এবার গত বছরের চাইতে মা মাছের ডিম দেয়ার পরিমাণ অনেক বেড়েছে।